‘নার্ভাস’ মিরাজের স্বপ্নের অভিষেক


মেহেদী হাসান মিরাজ
দূরের পাহাড়চূড়ার দিকে তাকিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ বললেন, ‘ওটা বোধ হয় আইস রক।’ গ্রীষ্মপ্রধান শ্রীলঙ্কায় বরফ জমে কোন পাহাড়ে? আসলে ওটা শ্রীলঙ্কার অন্যতম দর্শনীয় বস্তু সিগিরিয়া পাহাড়। তা মিরাজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার যেমন ক্রমেই চূড়ার দিকে এগিয়ে চলেছে, তাতে তাঁর দৃষ্টি পাহাড়চূড়ার দিকেই পড়া উচিত। টেস্টে সোনায় মোড়ানো অভিষেক, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে। পরশু ওয়ানডে অভিষেকেই পেলেন ২ উইকেট। পার্থক্য হলো, প্রথম টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েও ছিলেন পরাজিত দলের সদস্য। আর এখানে তিনি বিজয়ী দলে। স্বপ্নের মতো অভিষেক। কাল নিজের মুখেই তরুণ অফ স্পিনার ‘স্বপ্ন’ কথাটি উচ্চারণ করলেন, ‘হ্যাঁ, টেস্টের মতো স্বপ্নের অভিষেক হলো ওয়ানডেতেও। এখন আমাকে এটা ধরে রাখতে হবে।’ মাত্র ৭ টেস্ট খেলেছেন, তাতেই যেন কেমন টেস্ট খেলোয়াড়ের তকমা লেগে গিয়েছিল গায়ে। তবে সব সময় ভাবতেন, কবে আসবে সেই দিন, যেদিন ওয়ানডেতেও তাঁর ডাক পড়বে। মিরাজ আনন্দাপ্লুত যে টেস্ট খেলে শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার পরই ডাকটা পেলেন, ‘বোর্ড প্রেসিডেন্ট স্যার যখন আমাকে বললেন, তোমাকে ওয়ানডে খেলতে যেতে হবে, ওটা ছিল আমার খুব আনন্দের মুহূর্ত।’ তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে মিরাজ খুব কৃতজ্ঞ যে ওয়ানডেতে ভালো অভিষেক হয়েছে এবং জিতেছে দল।


পরশু রণগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়াম যে মিরাজকে দেখেছে, তিনি সপ্রতিভ এক ক্রিকেটার। মনেই হয়নি, এটাই তাঁর প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। ম্যাচের পর তামিম ইকবালও মিরাজ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ওকে দেখে তো মনেই হয়নি প্রথম ম্যাচ খেলেছে।’ না, মিরাজের বুকের মধ্যে একটু ধুকপুকানি কিন্তু ছিল। টেস্টে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দুটি জয়ের অন্যতম নির্মাতার পা একটু কাঁপছিল। শেষ পর্যন্ত এই ধুকপুকানি দূর হয়েছে দলের সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটারের কারণে। ‘আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু মাশরাফি ভাই, সাকিব ভাই, মুশফিক ভাই, তামিম ভাই এবং রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) যেভাবে সাহায্য করেছেন, তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে সব সময়ই মাঠে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, এ কিছুই না। তুই ভালো করবি। মাশরাফি ভাই তো আমার হাতে বল দিয়ে বললেন, তুই ঠিক জায়গায় বল ফেলে যা, তোর বল ওরা খেলতে পারবে না’—দলের বড় ভাইদের প্রতি এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন মিরাজ। ওয়ানডেতে কেন একটু স্নায়ুকাতর ছিলেন, সেটির একটি ব্যাখ্যাও আছে মিরাজের কাছে, ‘টেস্টেও চাপ আছে, তবে এতটা নয়। কারণ টেস্ট লম্বা খেলা, নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার অনেক সময় পাওয়া যায়। ওয়ানডেতে সময় কম।’ মিরাজের চোখে বাংলাদেশ প্রায় নিখুঁত একটি ওয়ানডে খেলেছে পরশু। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং—তিনটি বিভাগেই পর্যুদস্ত হয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাঁর কথা, ‘দলের ১১ জনই যখন অবদান রাখে, তখন দলের সাফল্য আসেই। এদিন তামিম ভাইয়ের ওই সেঞ্চুরি, সাকিব ভাইয়ের অমন ইনিংস, সাব্বির ভাইয়ের ব্যাটিং এবং শেষে মোসাদ্দেক ও রিয়াদ ভাই যেভাবে শেষ টেনেছেন, তা দুর্দান্ত। তারপর বোলিং ভালো হয়েছে, ফিল্ডিংও। শুভাগতদা অসাধারণ দুটি ক্যাচ নিয়েছেন।’ প্রথম ম্যাচেই জয় এল, মিরাজ ভাবছেন, সিরিজ জয় খুবই সম্ভব যদি কোনো ভুল না করে দল। আগের মতো ভুল মনে হয় হবেও না। ওয়ানডে জয়ের পর বাড়িতে মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবাই ভীষণ খুশি যে ওয়ানডে অভিষেক তাঁর জয়েই হলো। তবে আরও আনন্দময় মুহূর্তের অপেক্ষায় আছেন মিরাজ। সিরিজ জয়ের আনন্দের।

No comments

Powered by Blogger.