মুমিনুলের ভাবনায় নেই বিশ্বকাপ

ক্রাইস্টার্চের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভুলতে শুরু করেছেন ক্রিকেটাররা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ব্যস্ততা ও পরিবারের সাহচর্যে মানসিক ধাক্কা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছেন তারা। বিশ্বকাপ আসন্ন বলে ঘরোয়া লিগের গুরুত্ব বেড়ে গেছে অনেক। স্বপ্নের স্কোয়াডে থাকার জন্য নিজেদের পারফরম্যান্সে পাখির চোখ করছেন সবাই। তবে এ ভাবনার বাইরে গত বিশ্বকাপ খেলা মুমিনুল হক। বিশ্বকাপ দলে থাকার কোনোরকম প্রত্যাশা করছেন না এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

রোববার চ্যানেল আই অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাতকারে মুমিনুল কথা বললেন বিশ্বকাপ সম্পর্কে নিজের উপলব্ধি, নিউজিল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা ও নিজের বিয়ে নিয়ে।

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনা কতটা ভুলতে পেরেছেন?
বাংলাদেশে আসার আগ পর্যন্ত খুব আতঙ্কে ছিলাম। দেশে আসার পর কিছুটা ঠিক ছিল। প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। আর ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। জীবনে এরকম কখনও হয়নি, হঠাৎ করে এমন হওয়াটা তো…। দেশে আসার পর অনেকটা ভুলতে পেরেছি।
মসজিদে হামলার ভিডিওটা কখন দেখেছেন?
হোটেলে আসার পর ভিডিওটা দেখেছি। ওটা দেখার পর আরও বেশি ভয় লাগছিল। আতঙ্কে ছিল সবাই। ওই একটা রাত আমরা কেউই ঘুমাতে পারিনি। আমার জীবনে দুইটা দিন…।
মসজিদের সামনে গিয়ে কী দেখতে পান?
সবাই যেটা দেখেছে সেটাই, অন্যদের কাছে যেমন শুনছেন তেমনই। ওটা অনেক লম্বা কাহিনী, এখন বলতে পারব না। আর এগুলো নিয়ে বেশি আলোচনাও করতে চাই না।
সেদিনের ঘটনা পরিবারের মানুষদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন?
হ্যাঁ, ফ্যামিলির সবাই জানে, আসার পর যারা জিজ্ঞেস করেছে তারা সবাই জানে। এতবার বলেছি যে এখন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নামার পর ভয়টা আরও কেটেছে কিনা?
হ্যাঁ, খেলায় নামার পর আস্তে আস্তে স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে। বাসায় যখন একা একা থাকা হয় তখন মনের ভেতর জিনিসটা বারবার চলে আসত। এ কারণে তাড়াতাড়ি খেলার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেছি।
এ প্রসঙ্গ বাদ দিচ্ছি। নিউজিল্যান্ডে দুইটা টেস্ট খেলেছেন। চার ইনিংসে করেছেন মাত্র ৪৫ রান। একটা ইনিংসও বড় হল না…
যেকোনো খেলোয়াড়ের মাঝে মাঝে এমন সময় আসবে। জিনিসটা হল, আমি ব্যাপারটা কীভাবে নেব। বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে গেলে হয়ত এখান থেকে শেখা যাবে না, ওই অভিজ্ঞতা আগামীতে কীভাবে উপকারে লাগানো যায় সেটিই বড় ব্যাপার। কোনো জায়গায় ত্রুটি বা সমস্যা হয়ত ছিল। তেমন কিছু না হলে তো রান করতে পারতাম।
এবারের সমস্যা মানসিক না স্কিলের?
আমার কাছে মনে হয় দুই জায়গাতেই সমস্যা ছিল। মানসিকই হয়ত বেশি ছিল। যে কারণে খেলার ধরণটা ধরতে পারিনি। তবে এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। যেটা খারাপ গেছে সেটা নিয়ে যতবেশি চিন্তা করবো ততবেশি পোড়াবে। ভালো কিছু হবে না।
টেস্টে আপনার গড় ৪১। বিদেশের মাটিতে মাত্র ২৩। দেশে ৮ সেঞ্চুরি, বিদেশে একটিও নেই। এটা কি মানসিক কারণেই হচ্ছে?
হয়ত টেকনিক্যালি আরেকটু সাউন্ড হতে হবে, আর মানসিকভাবে আরেকটু শক্ত হতে হবে। টেকনিকের সাথে সাথে মানসিক- দুই জায়গাতেই উন্নতি করতে হবে।
অথচ বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন দিনের ম্যাচে ১৫১ রানের ইনিংস খেলেই আপনি পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছিলেন।
দেশের ভেতর-দেশের বাইরে, এগুলো নিয়ে আমি চিন্তিত না। কারণ আমি ভেতর-বাহির সব জায়গাতেই উন্নতি করতে চাই। আমি যতবেশি জিনিসটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করবো, চিন্তা করবো ততই উন্নতি করার রাস্তা কমে যাবে। আমার এখনও সময় আছে উন্নতি করতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

দেশে ও বিদেশের মাঝে পার্থক্য কী থাকে?
দেশের বাইরে চ্যালেঞ্জ বেশি থাকে। মানসিক চ্যালেঞ্জ, স্কিল, কন্ডিশন।
২০১৫ বিশ্বকাপ খেলেছেন। আরেকটা বিশ্বকাপের আগে আপনি ওয়ানডে দলে নিয়মিত নন। আক্ষেপ কাজ করছে কিনা?
ওটা নিয়ে আমি, যদি ভালো খেলতে পারতাম আমার জন্য জিনিসটা সহজ হত। যেহেতু আমি আমার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী খেলতে পারিনি যে কারণে এটা নিয়ে খুব আবেগী হয়ে পড়ার সুযোগ নেই।
বিপিএলে প্রত্যাশামতো খেলতে পারেননি। একাদশের বাইরেও চলে যেতে হয়েছে কয়েকটা ম্যাচে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে?
সমানতালে কখনই পারফর্ম করা যায় না। কখনও কখনও বাজে সময় আসে। খারাপ সময়টা ধৈর্য ধরে পার করতে হবে। আমার হয়ত খারাপ সময় যাচ্ছে।
একটা সময় তিন ফরম্যাটে খেলেছেন। কিন্তু লম্বা সময় ধরে শুধু টেস্ট খেলছেন। বিশ্বাস করেন এই ঘেরাটোপ ভেদ করে বের হওয়া সম্ভব?
আপনি যেভাবে বলছেন, এটা ঘেরাটোপ। আমি তা বলছি না। এভাবে ভাবছি না। ইতিবাচক চিন্তা করি। বর্তমান নিয়ে চিন্তা করি। প্রতিটা মুহুর্ত কীভাবে কাজে লাগাবো সেটাই আমার মাথায় থাকে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি উন্নতি করার। যদি চিন্তা করি, ঘেরাটোপ, তাহলে আমি ওয়ানডে টিমে জীবনেও খেলতে পারব না, টি-টুয়েন্টিও না। থাকতে হবে আজকের দিন নিয়ে। আজ যেমন কালকের ম্যাচের জন্য অনুশীলন করছি, সেটা কতটা ভালভাবে করা যায় সেটাই চিন্তা করি।
তাহলে কি ওয়ানডে টিম আপনি মিস করেন না?
অবশ্যই মিস করি। সবাইকে মিস করি। যেহেতু আমি খেলতে পারছি না। মিস তো করবই। সেটা তো আমি প্রকাশ করতে পারি না, মিস করি।
পরিশ্রম তো করেই যাচ্ছেন। সেটার প্রতিফলন কবে দেখা যাবে; নাকি ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকবেন?
ভাগ্যের ওপর না। যত পরিশ্রম করব, আমার জিনিসটা যখন ঠিকভাবে হবে, হয়ত মাঝে মাঝে কাজ হয় না। যেটা বললেন বিপিএলে হয়ত কাজ হয়নি জিনিসটা। তাই হয়ত পারফর্ম করতে পারিনি।
নিউজিল্যান্ডে রান না পাওয়ার পেছনে কি বিপিএলে ব্যর্থতার কোনো যোগসূত্র আছে?
বিপিএল ভালো যায়নি, তাই বলে হতাশ ছিলাম না। ভেবেছিলাম ওখানে গিয়ে ঘাটতি মিটিয়ে ফেলব। ওভারকাম করতে পারব। একটা ফরম্যাট থেকে আরেকটা ফরম্যাটে গেলে কিছুটা মানিয়ে নেয়ার ব্যাপার থাকেই।
টেস্ট নিয়ে কী ভাবেন? কতদূর যেতে চান?
ওরকম লক্ষ্য সেট করিনি। গোল সেট করলে সেটার মাঝে বদ্ধ হয়ে যাব, তখন হয়ত চাপ অনুভব হবে। আর ভবিষ্যৎ তো সবসময় অনিশ্চিত। আমি যখনই যে টিমের জন্য খেলি, ভালো এফোর্ট দিয়ে নিজের জবাবদিহিতা অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করি।
আপনার ব্যাটিং দেখলে সাদা পোশাকেই বেশি মানানসই মনে হয়। টেস্ট নিয়ে আলাদা প্যাশন কি ছিল?
না, আমার কোনো সময়ই এটা ছিল না। আমার আন্তর্জাতিক ডেব্যু হয়েছে ওয়ানডে দিয়ে। টেস্টে আমার পারফরম্যান্স ভালো, এ কারণে হয়ত টেস্ট খেলোয়াড় মনে করা হয়। সব ফরম্যাটে খেলার ইচ্ছা ছিল।


বিশ্বকাপ খেলার কোনো আশা দেখেন কিনা?
এখন যে টিম কম্বিনেশন, তাতে আশা করার সুযোগ নেই এক্সট্রা অডির্নারি পারফরম্যান্স না করলে। এটাই সত্যি কথা। যদি নিউজিল্যান্ডে টেস্টে ভালো করতাম কিংবা বিপিএলে ভালো করতাম তাহলে হয়ত একটা সুযোগ থাকত। ভবিষ্যৎ কীভাবে আগাবে সেটা কেউ জানে না, এখন যা করছি সেটা ঠিকভাবে করে যাওয়াই উচিত।
বিশ্বকাপ তো আগেরবার খেলেছেন। এই আসর নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
বিশ্বকাপ অনেক বড় একটা আসর। অন্য একটা টুর্নামেন্ট বা সিরিজ ৫০ ভাগ অবদান রাখবেন, আর বিশ্বকাপে ৩০ ভাগ অবদান রাখবেন তা-ই বেশি ফোকাসড হবে। সবাই মনোযোগ দিয়ে বিশ্বকাপ দেখে, কাউন্ট করে। আর দেশের জন্য খেলার অনুভূতিটা বিশ্বকাপে প্রবল হয়ে ওঠে। এই ব্যাপারটা অন্যরকম। বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ তো সবাই পায় না, ভাগ্যও লাগে।
এখনকার টিমটা ২০১৫ বিশ্বকাপের চেয়ে কতটা শক্তিশালী?
অনেক বেশি। আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিণত খেলোয়াড় এই দলে। ওইসময়টায় এখনকার অধিকাংশ খেলোয়াড় ছিল। এখন তারা অনেকবেশি অভিজ্ঞ, গত চার বছরে অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখি। আমার মনে হয় বিশ্বকাপে যে সব টিম তাদের মধ্যে ভারত শক্তিশালী। অন্যান্য যে দল আছে সবার সঙ্গেই বাংলাদেশ খুব ভালো খেলে। এবার ইংল্যান্ডে খেলা, ওয়ানডের সংস্করণের জন্য কোনো কন্ডিশনই কঠিন না। টেস্টের জন্য কঠিন হয়। ইংল্যান্ড বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য অনেক ভালো জায়গা। ট্রু উইকেট হয় সেখানে। ব্যাটসম্যানরা ভালো করবে।
ব্যাটিং না বোলিং কোন বিভাগে বাংলাদেশ বেশি সমৃদ্ধ?
দুই বিভাগেই বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী ওয়ানডেতে। ব্যাটিংয়ে তামিম, সৌম্য, লিটন, সাকিব, মুশফিক রিয়াদ, সাব্বির আছে। বোলিংয়ে মাশরাফী ভাই, রুবেল, মোস্তাফিজ আছে। তাসকিন যদি ফিট থাকে তাহলে হয়ত থাকবে। আর অলরাউন্ডার খেলালে সাইফউদ্দিন। সবদিক থেকে চিন্তা করলে আমাদের টিম অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ।
মোস্তাফিজ প্রথম বিশ্বকাপে কতটা ব্যবধান গড়তে পারবে।
উইকেট যদি ড্রাই হয় তাহলে তো সুবিধা হবে। এখন কোন ভেন্যুতে খেলা, কেমন উইকেট, তার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে।
১৯ এপ্রিল নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন। আপনার হবু স্ত্রী (ফারিহা বাশার) ক্রিকেটার সৈকত আলীর শ্যালিকা। তার মাধ্যমেই পরিচয় কিনা?
সৈকত আলী আমার বিকেএসপির বন্ধু ছিল। সেখানে থাকাকালে আমার কী ধরনের মেয়ে পছন্দ, সেটা ও জানত। ওর মাধ্যমেই পরিচয়।
প্রেমের শুরু কবে, কীভাবে?
৩ বছর ধরে। লম্বা কাহিনী। এটা বলতে অনেক সময় লাগবে (হাসি)। ৩ বছর প্রেম করার পর দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়েটা হচ্ছে।
বিয়ের জন্য প্রিমিয়ার লিগে বিরতি নেবেন?
না, প্রিমিয়ার লিগ খেলব। বিয়ের দিন কেবল খেলব না।

No comments

Powered by Blogger.